Advertisement


মাতারবাড়ি বন্দর সড়কঃ পরিকল্পনা বাতিলে চকরিয়ায় মানববন্ধন


মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর সংযোগ সড়ক এর কারণে চকরিয়ার কাকরা এলাকায় ক্ষতিরমুখে পড়া লোকজন এ পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। 


মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর সংযোগ সড়ক প্রকল্পের আওতায় চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর হাসেরদীঘি থেকে কাকারা ইউনিয়নের বারআউলিয়া নগর রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রস্তাবিত বাইপাস সড়ক নির্মাণের ফলে উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন কাকারা ইউনিয়নের চার শতাধিক পরিবার। ফলে বিকল্প পথে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে তাদের শতশত বছরের পুরানো ভিটেবাড়ি রক্ষার দাবীতে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলো।


শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) জুমার নামাজের পর জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের শাহ ওমরাবাদ হাইস্কুল সংলগ্ন সড়কে কাকারা ইউনিয়নের এলাকাবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।


জানা যায়, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ২০২৫ সালে চালু হবে নির্মিতব্য দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর। ফলে সেখানে বন্দরের জাহাজ গুলোর উঠানামার পণ্যসমুহ সড়কপথে পরিবহন নিশ্চিত করতে ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের একটি ‘ডেডিকেটেড সংযোগ সড়ক’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় সরকারীভাবে।


সড়কটি মহেশখালীর মাতারবাড়ী বন্দর থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী হাঁসেরদিঘীস্থ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে যুক্ত হবে। পরে সড়কটি চকরিয়া পৌরসভার যানজট এড়াতে বাইপাস হয়ে কাকারা ইউনিয়নের বারআউলিয়া নগর রাস্তার মাথা এলাকায় গিয়ে আবারো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে যুক্ত হবে। এই বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে মাতামুহুরী নদীতে নির্মিত হবে আরও একটি নতুন সেতু।


ইতোমধ্যে সড়কটি নির্মাণের জন্যে মাঠ পর্যায়ে জরিপ, নকশা তৈরি, প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রস্তুত করতে জাপানি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তারই ধারাবাহিকতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে চকরিয়ার মাঠপর্যায়ে ডিজিটাল জরিপ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।


মানববন্ধনে উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকা পরিবারের লোকজন দাবী করেন, বাইপাস সড়কটি হাসেরদিঘী থেকে শুরু হওয়ার পর কাকারা ইউনিয়নের পুলেরছড়া ব্রীজে হয়ে মানুষের বসতবাড়ি এড়িয়ে স্থানীয় বনবিভাগের পাশ ঘেষে খোলা বিল দিয়ে বারআউলিয়া নগর রাস্তার মাথায় মিলিত হলে চার শতাধিক পরিবার তাদের ভিটেবাড়ি হারোনো থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি কয়েকশত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কয়েকটি মসজিদ ও কবরস্থান ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া যেহেতু ভিটেবাড়ির জমির মৌজা মূল্য নাল জমির মৌজা মূল্য থেকে অনেক কম সেহেতু বসতবাড়ি এড়িয়ে নাল জমি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হলে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনকে ক্ষতি পুরণ হিসেবে দেয়া অনেক সরকারি টাকা সাশ্রয় হবে।


উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকা পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, একটি কুচক্রি মহলের ইন্দনে শতশত বছরের পুরানো বসতভিটে থেকে উচ্ছেদের জন্য পরিকল্পিতভাবে বাইপাস সড়ক নির্মাণের এ নকশা তৈরী করেছে। এটি বাস্তবায়ন হলে শতশত লোক ভিটেবাড়ি হারা হয়ে পথে বসবে। তারা আরও বলেন, আমরা কখনো উন্নয়নের বিপক্ষে নই। আবার উন্নয়নের নাম দিয়ে শতশত পরিবার বাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবে সেটারও পক্ষে নই। তাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা সাশ্রয়ের পাশাপাশি শতশত পরিবারকে যেন ভিটেবাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে না হয় সেজন্য বিকল্প পথেই বাইপাস সড়ক নির্মানের দাবী জানাচ্ছি।


মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, বিশিষ্ট ব্যাংকার বেলাল উদ্দিন, শিক্ষক আলী আহমদ, অধ্যাপক মোস্তফা জামান হারেছ, মো. খালেদ নওশাদ, স্থানীয় বাইতুশ ছালাম জামে মসজিদের খতিব মৌলানা আব্দুর রহিম ও এনামুল হক এমইউপি প্রমুখ।