।। মুহম্মদ রুহুল আমিন ।।
জোয়ারের পানি কিছুটা উপছে পড়লেই মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বেশকিছু জায়গা প্লাবিত হয়। কুতুবদিয়া তো আছেই তাছাড়া ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, ঘড়িভাঙা এবং মহেশখালীর আরও কিছু নিম্নাঞ্চল নিমিষেই প্লাবিত হয়। এ খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তারপর এখানকার মানুষ ত্রাণ পায়। তাও আবার বাছাইকৃত কিছু লোক। ত্রাণের খবর প্রচার করতে পারলে আমাদের দরদী নেতারা বেশ উৎফুল্লবোধ করেন। অথচ ওসব দুর্যোগ পোহানোর পরে উৎফুল্লতা কেমন জানি নিরর্থক হয়ে দাঁড়ায়। যদি প্রথমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা যেত -তাহলে সাময়িক বেগটা পোহানোর তাগাদা পড়তো না। তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য মহেশখালী-কুতুবদিয়ার চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করাটা বেশ জরুরি। দ্বীপাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কিন্তু ত্রাণ নয়, তারা চায় টেকসই বেড়িবাঁধ।
তৎকালীন জোট সরকারের আমল থেকে বেড়িবাঁধের বিষয়টি জোর আলোচনায় থাকলেও প্রাজ্ঞ নেতার অভাবে মহেশখালী-কুতুবদিয়া এখনও অরক্ষিত। ঝড়, তুফান, বন্যা এ সবের মুহূর্তে দ্বীপাঞ্চলের মানুষের জীবন প্রতি বছরই সংশয়ের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। এমন সংশয় দূর করার জন্য কোনো সরকারের আমলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যা উপকূলবাসীর দুঃচিন্তার নিত্যনৈমত্তিক কারণে পরিণত হয়েছে।
সঙ্গত কারণে বলা যায়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কথা। তখন না ছিল প্রযুক্তির এত প্রসার, না ছিল মানুষের এত সচেতনতা। তাই হয় তো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছিল। কিন্তু আজ প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের সচেতনতা বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে ( মহেশখালীতে কাম্য হারে বাড়েনি), অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেড়েছে ঠিকই কিন্তু দ্বীপাঞ্চলবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তনের বদলে দুঃচিন্তাই বেড়েছে। একদিকে উন্নয়নের আগ্রাসন অন্যদিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের আক্রমণ। উন্নয়নের আগাসনের কথা বাদ দিয়ে সমুদ্রঢেউয়ের যে আগ্রাসন; এই মৌসুমী আগ্রাসন দুঃচিন্তা কাটতে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার চারিদিকে টেকসই বেড়িবাঁধের বিকল্প নেই।
সংসদিয় এলাকা হিসেবে -কক্সবাজার-২ আসন পুরোটাই ঝড়, তুফান-ঘূর্ণিঝড়ের কবলে কমবেশি ঝুঁকিতে থাকে। এ ঝুঁকি কমানোর প্রয়োজনে এবং দ্বীপাঞ্চলের মানুষকে সংশয়মুক্ত করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করাটা মানুষের প্রাণের দাবি।
এমনকি সরকারের গৃহীত প্রকল্প রক্ষার্থেও মহেশখালী-কুতুবদিয়ার চারপাদশে টেকসই বাঁধের বিকল্প নেই।
টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৯৯১ সালে হয়েছে, ১৯৯৭-৯৮ সালে আর ২০১৬ সালেও কমবেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে উপকূলবাসী। তারপর পেয়ে বসেছে কিছু জনে ত্রাণ। এভাবে ত্রাণ পেয়ে তো আর পরিত্রাণ পাওয়া যায় না। পরিত্রাণ পেতে চাই -টেকসই বাঁধ। টেকসই বেড়িবাঁধ বিহীন বিড়ম্বনা দ্বীপবাসীকে সর্বদা দুঃচিন্তায় নিমজ্জিত করছে। কত দুঃচিন্তা আর ভিড়ম্বনার শিকার হলে মহেশখালী-কুতুবদিয়াবাসী টেকসই বেড়িবাঁধ পাবে তা এখন দ্বীপবাসীর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখকঃ শিক্ষক ও মহেশখালীর সন্তান।।