কালের কণ্ঠ।। কক্সবাজারে ভোটের তিন মাসে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ২০টি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এসব অস্ত্রের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
১১টি বন্দুক
স্থানীয় সূত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলার ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ১১টি বন্দুক। গত ১৭ আগস্ট দুপুরে ঘটে এই হত্যাকাণ্ড। সিকদারপাড়ার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন নোবেল (৪২) ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক। তিনি চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে গ্রামে এসে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এমন সময়ই ৩০-৩২ জন সশস্ত্র ব্যক্তি তাঁর ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় গত ১৯ আগস্ট মামলা করা হয়। মামলায় ২০ জনের নাম এবং আরো ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। বাদী তাঁর এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামিদের মধ্যে তিনজন লম্বা বন্দুক ও আটজন বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়ে।
মামলার বাদী মামুনুর রশীদ গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে ১১টি বন্দুক ব্যবহৃত হলেও গত তিন মাসে একটি বন্দুকও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।’
মহেশখালীতে তিনটি বন্দুক
গত ২০ সেপ্টেম্বর মহেশখালীর কুতুবজোম ইউপি নির্বাচনে নয়াপাড়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে আবুল কালাম (৫২) খুন হন। ২২ সেপ্টেম্বর মহেশখালী থানায় মামলা করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, তিনটি লম্বা ও কাটা বন্দুক ব্যবহার করা হয়। মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ এ পর্যন্ত কোনো বন্দুক উদ্ধার করতে পারেনি।
গুলির শব্দ
একই দিন কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের বড়ঘোপ ইউপির পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন পোলিং এজেন্ট গুলিতে নিহত হন। পরের দিন ২১ সেপ্টেম্বর কুতুবদিয়া থানায় কুতুবদিয়া প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শাহাব উদ্দিন মামলা করেন। এতে ১০০-১৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় লোককে আসামি করা হয়। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, সেদিন কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল। এ সময় গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। পরে হামলা অব্যাহত থাকায় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে কেন্দ্রের ভেতর মো. হারিম (৩৫) নিহত হন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
বন্দুকসহ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত
গত ৫ নভেম্বর কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউপি সদস্য প্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদার ও তাঁর বড় ভাই জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার দুর্বৃত্তদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার দুই দিন পর জহির মারা যান। এ ঘটনায় কুদরত আরেক প্রার্থী ও স্থানীয় বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ১৯ জনের নামে মামলা করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রচার চালানোর সময় প্রতিপক্ষ প্রার্থী লিয়াকত বাহিনী বন্দুকসহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়।
গোলাগুলি
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থিত লোকজনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আকতারুজ্জামান পুতু নিহত হন। এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় কোনো লাইসেন্সধারী অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহার ও প্রদর্শন করা যাবে না বলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এটা নির্বাচনের আগে যথারীতি জনসাধারণকে জানানো হয়ে থাকে।’ তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কাজটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর রুটিন মাফিক কাজ। তারা করেও থাকে। গণমাধ্যম অনেক সময় এসব তথ্য পায় না। তবু তিনি নির্বাচন চলাকালে অবৈধ অস্ত্রের বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে জানাবেন।