Advertisement


মাতারবাড়ির মাদ্রাসার সেই বিতর্কিত অধ্যক্ষকে বহাল রাখতে প্রভাবশালীদের তোড়জোড় (ভিডিও)

তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক।। মাতারবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাতারবাড়ি মজিদিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র আলীম মাদ্রাসায় সৃষ্টি সংকট যেনো কাটছেই না। মাদ্রাসাটিতে পরিচালনা কমিটি, অধ্যক্ষ ও শিক্ষক ইস্যুতে দীর্ঘদিন থেকে নানা জটিলতার কারণে মাদ্রাসাজুড়ে এক অচল অবস্থা বিরাজ করছে। খোদ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা স্পর্শকাতর ও জটিলসব অভিযোগ উঠার পর এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হয়ে ঘটনার অনুসন্ধান চলছে। এরই মধ্যে বিতর্ক এ অধ্যক্ষকে বাঁচাতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র উঠেপড়ে লেগেছে বলে সূত্রের তথ্য।

🔴 Sobkhabor Exclusive: মাতারবাড়ি মজিদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ্যের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুললেন মোহাম্মদ উল্লাহ চেয়ারম্যান।

Posted by মহেশখালীর সব খবর on Wednesday, February 2, 2022
অধ্যক্ষের বিষয়ে যতো অভিযোগ ভিডিও দেখুন△
জানা গেছে -বঙ্গবন্ধু  ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই পোড়িয়ে ফেলা, সরকারি বই বিক্রি, নারীঘটিত ঘটনা, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মাতারবাড়ি মজিদিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত বছরের ২৩ নভেম্বর  উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার [মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)] ফয়জুল করিমের উপস্থিতিতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবক নিয়ে মাদ্রাসার বৈঠক  হয়।  বৈঠকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ গুলো খসড়া আকারে করে পরিচালনা কমিটির সভাপতি, শিক্ষক ও অভিভাবকের স্বাক্ষরে লিখিত রেজুলেশন করা হয় এবং তদন্ত কমিটির নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য অনুসারে জানা যায়, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থাকা রফিকুল হায়দার অফিস সহকারী মুবিনের সহয়তায় সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে এছাড়াও রফিকুল হায়দারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই পোড়ানো ও নারীঘটিত ঘটনার অভিযোগ আনা হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাবদ বিভিন্ন টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এঘটনার প্রায় দু'মাস হয়ে গেলেও রহস্যজনক ভাবে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় নি। পরে এ নিয়ে মহেশখালীর সব খবর এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদন এর সূত্র ধরে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেন।

জানা গেছে- গত বছরের সেপ্টেম্বরে অধ্যক্ষ মৌলানা কামাল হোসেন অবসরে গেলে জৈাষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় রফিকুল হায়দারকে। এর কয়েকদিন পরই নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় মীর মোশাররফ হোসেনকে। এনিয়ে নানা সংকট সৃষ্টি হয়। পরেও আবারও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় রফিকুল হায়দারকে। তাতেও সংকট নিরসন না হয়ে বরং বাড়তে থাকে।

মাদ্রাসার শিক্ষক নুর বক্স জানান, অফিস সহকারী মুবিনের সহয়তায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল হায়দার  সরকারি বই বিক্রি করে দিয়েছে। তা আমরা অবগত করলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেননি এখনো। তাছাড়া এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের কমতি নাই বলে জানালেন এ শিক্ষক।

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, সরকারি বই বিক্র, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই পোড়ানো ও নারীঘটিত ঘটনার অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয় এবং শিক্ষক ও অভিভাবকসহ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিততে গভনিং কমিটির বৈঠকে লিখিতভাবে  তদন্ত কমিটির নির্দেশ দেওয়া হলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে তদন্ত কমিটি গঠন না করে রেখে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পর কমিটি সরজমিন মাদ্রাসায় গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখেন এবং অনুসন্ধান করেন। তারা বিভিন্নজনের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্যও গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।

এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন ও কার্যক্রম শুরু করার পর নড়েচড়ে বসে দুর্নীতিবাজ চক্রটি। তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় বিতর্কিত এ অধ্যক্ষকে বহাল তাবিয়তে রাখতে নানা তোড়জোড় শুরু করেছে বলেও সূত্রে প্রকাশ।

এ প্রসঙ্গে মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন -নানা অনিয়ম দুর্নীতির পরেও এলাকার প্রভাবশালীদের সুনজরে থাকায় দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে। তদন্ত কমিটিকে বিভ্রান্ত করতে চক্রটি নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহি মাদ্রাসাটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থায় এ অধ্যক্ষকে প্রত্যাহার করা না হলে মাদ্রাসাটি কঠিন সংকটে পড়ার আশংকা রয়েছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার) ফয়জুল করিম জানিয়েছেন- মহেশখালীর সব খবর এর রিপোর্ট এর ভিত্তিতে যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল, তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। মাদ্রাসাটির সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে সুপারিশ করা হয়েছে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, যেহেতু সরকারি বই বিক্রি, বঙ্গবন্ধুর বই পোড়ানো ও নারীঘটিত ঘটনার মত স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, রিপোর্টের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অধিকতর তদন্ত করা হবে।