Advertisement


দিনভর মহেশখালীতে মাংসের বাজারে কসাইদের নৈরাজ্য, ঘুমিয়ে ছিলো প্রশাসন


সব খবর ডেস্ক।। আজ পবিত্র লাইলাতুল বরায়াতের ফাতেহা উপলক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও মহেশখালীর প্রতিটি ছোটো-বড়ো বাজার এলাকায় মাংসের চাহিদা ছিলো ব্যাপক। মাংস বিক্রি করারবেলায় আজ বাজারগুলোর স্থানীয় ইজাদারের যোগসূত্রতায় কসাইরা ব্যাপক গলাকাটা বাণিজ্য করে গেলেও মহেশখালীর প্রশাসন ঘুমিয়ে ছিলো বলে ভোক্তাদের অভিযোগ।

কোন প্রকার তৎপরতা ও বাজার মনিটরিং ছিলো না প্রশাসনের। যার ফলে মাংস কিনতে এসে কসাইদের হাতে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে ভোক্তদের। মাংসের জন্য গুণতে হয়ে বহুগুণে বাড়তি টাকা। বাজারে মনিটরিং ছিলো না কেন জানতে চাইলে- "সারাদেশেইতো এমন অবস্থা" বলে মন্তব্য করে উত্তর এড়িয়ে যান মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

সূত্র জানিয়েছে -আজ বাজারগুলোতে মংস বিক্রির উদ্দেশ্যে বিপুল সংখ্যক পশু জবাই করা হয়। কিন্তু সকাল থেকে হঠাত্ মহেশখালীতে মাংসের বাজারে আগুন ধরার মতো অবস্থা পড়ে যায়। একই সাথে বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দামও। নিয়মিত বাজারমূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি মাংসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় ১৫০ টাকা থেকে ২০০ ও আড়াইশ টাকা পর্যন্ত। হঠত্ এমন নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে এসে বিব্রতকর অবস্থা ও হতাশায় পড়ে যান নিন্মআয়ের মানুষসহ সব ধরণের ক্রেতারা। দিনভর বাজারগুলোতে টানা এ নৈরাজ্য চললেও মহেশখালীর প্রশাসনের ঘুম ভাঙেনি। বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রকার চেষ্টাই ছিলো না প্রশাসনের।

জানা গেছে- এবারের সবেবরাতের এ মাংসের বাজারকে কেন্দ্র করে মহেশখালীর বিভিন্ন বাজার টু বাজার এর মাংস ব্যবসায়িরা আগে থেকে সিন্ডিকোট গঠন করে ফেলে। ক্রেতাদের উপর মাংসের বাড়তি দাম চাপিয়ে দেওয়ার জন্য করা এ সিন্ডিকেটের কারণে আজ মহেশখালীর প্রায়ই প্রতিটি মাংসের বাজারের চিত্র ছিলো একই। বিভিন্ন সময় মাংসের বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়িদের মধ্যে মাংসের দাম বাড়ানো -কমানো নিয়ে এক ধরণের প্রতিযোগীতা থাকলেও এবার তা লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিটি বাজারের সব মাংস বিক্রেতার আচরণ ছিলো যূথবদ্ধ।

সূত্রের তথ্য মতে- মূলতঃ গতকাল রাতে মাংসের দাম বাড়ানো নিয়ে মহেশখালীর সব বাজারের ব্যবসায়িদের মধ্যে গোপন আলোচনায় দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এমন সিন্ডিকেট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রখেন বাজারগুলোর ইজারাদার নেতৃত্বস্থানীয় কসাইরা। বড় মহেশখালীর নতুন বাজার থেকে এ সিন্ডিকেট পরিচালিত হয় বলে সূত্রের তথ্য বলছে। এমন আগাম সিন্ডিকেট গঠনের বিষয়ে প্রশাসনে তথ্য ছিলো কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তথ্য থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ ছিলো না কেনো তা নিয়েও বেশ সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে ওয়াকিবহাল ভোক্তদের মাঝে।

সকাল থেকে বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে -প্রতি কেজি মাংস ৬৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হচ্ছে। মাংস কিনতে আসা বিভিন্ন লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়- এ ধরণের ফাতেহামূলক ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ করে গরুর মাংসের চাহিদা থাকে বেশী। ধর্মপ্রাণ মানুষ এ দিন ধর্মপালনের পাশাপাশি উন্নত খাবারগ্রহণের উদ্যোগ নেন। তাই মাংসের চাহিদা থাকলেও যোগানও থাকে অধিক। অন্যান্য সময় এমন দিনগুলোতে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের আগাম তৎপরতা থাকলেও এবার ছিলো রহস্যজনক নীরব। বিগত সময়ের মতো মাংসের দাম নির্ধারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে ঘোষণা যেমন আসেনি ঠিক তেমনই ভাবে বাজার মনিটরিং এর উদ্যোগও ছিলো না।

জানা গেছে- এবার বাজারে এমন নৈরাজ্যের কারণে অনেক নিন্মআয়ের মানুষ ঠিক মতো মাংস কিনে ফাতেহা দিতে পারেননি। কেউ কেউ ফর্মমুরগী কিনে কোন রকমে বাজার থেকে ফিরলেও অনেকই সরকার ও প্রশাসনের সমালোচনা করতে করতে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন।

প্রশাসনের এমন দায়িত্বহীনতায় অনেককে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। দিনভর সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুক ব্যবহারকরীরা সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি এমন নিয়ন্ত্রণহীন বাজার নিয়ে নানা ট্রল করতে দেখা যায়।

এমন দিনে প্রশাসনের বাজার মনিটরিং ছিল না বা বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ ছিলো না কেন জানতে চেয়ে সন্ধ্যায় মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিনকে ফোন করা হলে তিনি- সরাদেশেইতো এমন অবস্থা -বলে মন্তব্য করেন। বিশেষ এসব দিনকে পুঁজি করে ব্যবসায়িরা এমন কাণ্ড ঘটায় বলেও জানান। তবে তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে মূল জিজ্ঞেসার উত্তর এড়িয়ে যান।
 
মাহবুব রোকন//