আন্দোলনের একটি স্বার্বজনীন রুপ পেতে শুরু করল। দিন যতই যাচ্ছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্টির মনে ভীতি বৃদ্ধি পেতে লাগল। যে কোনো উপায়ে আন্দোলনের দাবানলকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল দখলদার বাহিনী। প্রতিদিনের ন্যায় এদিনও ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে মুক্তির দাবিতে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে সর্বস্তরের জনতা। শাসকগোষ্ঠীর টনক নড়ে যায়। ক্ষমতার মোহ তাদেরকে অন্ধ করে দেয়। রাজপথ দখলে নেয়ার জন্য নামিয়ে দেওয়া হয় সেনাবাহিনী। মিছিলে গুলি বর্ষণের আদেশ দেওয়া হয়। জনতা রাজপথ ছাড়ে না। উন্মত্ত হানাদার বাহিনী স্ব-রুপে আবির্ভূত হয়। গুলি বর্ষণ করা হয় নিরীহ জনতার উপর। এদিন গভীর রাতে পাওয়া এক খবরে জানা যায়, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে পাঁচ ঘণ্টা ম্যারাথন বৈঠক করে। হানাদাররা ষড়যন্ত্রের বীজ বুনতে থাকে নতুন করে। ঢাকা ও টঙ্গীতে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর গুলিবর্ষণে শতাধিক লোক নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। এদিন সারাদেশে সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন অসংখ্য নিরস্ত্র জনতা। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৮ জনে। রাজশাহী রংপুরে আবার কারফিউ জারি করা হয়।
সময় যত গড়াচ্ছিল মুক্তিকামি জনতার উত্তাল আন্দোলন তত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিল। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, টঙ্গী সহ আরো বেশ কিছু জেলাতে মিছিল করতে গিয়ে অনেকেই পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। মুক্তিকামী জনতা রক্ত দিল, কিন্তু রাজপথ ছাড়ল না। গুলি বর্ষণের তীব্রতার সাথে তাল মিলয়ে মিছিলে লোক বাড়তে লাগল। এদিন স্বাধিকার আন্দোলনে শামিল হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। এদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে চলমান দমন-পীড়নকে গণহত্যা আখ্যায়িত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি একটি বিবৃতি দেন। একই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ ও যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের ঘোষণা দেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। উত্তাপ ছড়াল তীব্রবেগে। শাসকগোষ্ঠী এবার পিছু হঠল। এক পর্যায়ে এদিন সন্ধ্যা নাগাদ মার্শাল ল অথরিটি সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দেশব্যাপী আন্দোলন আরো জোরদার হতে থাকে।