৭ই মার্চের জনসভার ক্রম ও কর্মসূচী ঠিক করতে এ দিন বঙ্গবন্ধু মিটিং করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে। পুরো জাতি যখন স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত তখনো বাঙ্গলীর স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ইয়াহিয়া খান। এ দিন হঠাৎ করে এক রেডিও ভাষনে ২৫ শে মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক বসবে বলে ঘোষনা দেয় জান্তা সরকার। ভুট্টোর পিপলস পার্টি অধিবেশনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অন্যদিকে সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করছে বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। এদিনের আলোচিত ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে মুক্তিকামি সাড়ে তিনশ কয়েদি পালানোর সময় রক্ষীদের গুলিতে ৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। রাজশাহীতে মুক্তিকামি মিছিলকারীদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে ১ জন নিহত ও ১৪ জন আহত, খুলনায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও গুলিবর্ষণ- ১৮ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হয় এদিন। ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানী মুক্তিকামি জনতাকে ''দুষ্কৃতিকারি'' আখ্যা দিয়ে বলেন, "জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হতে দেব না, ঐক্য বিনষ্টের যে কোন প্রচেষ্টা সেনাবাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে"। এ দিন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নিরস্ত্র জনতাকে নির্বিচারে হত্যার পরিকল্পনায় কুখ্যাত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং একই সাথে সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে একটি ঘোষণা প্রচার করে মি. ইয়াহিয়া। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে নেমে আসেন প্রতিবাদি ছাত্র-জনতা। প্রতিবাদি জনতার কণ্ঠ আরো শক্তিশালি হয়। আরও জোরালোভাবে উঠে আসে স্বাধীনতার দাবী।
স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে এ দিন বিকেলে বায়তুল মোকাররমের সামনে এক সমাবেশে মাওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সকলকে মুক্তিসংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহব্বান জানান। এ দিন সাংস্কৃতিক কর্মীরাও রাজপথে মিছিল করেন। মিছিলে নায়ক রাজ্জাক, নায়িকা কবরি পরিচালক জহির রায়হানসহ জনপ্রিয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহন করেন। এদিন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম ভারতের ওপর দিয়ে পাকিস্তানের বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে মর্মে ঘোষণা দেন। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মুক্তিকামি মানুষের আবেগ আর অনুভূতির প্রকাশ ঘটতে থাকে প্রকম্পিত মিছিলে মিছিলে।