Advertisement


মরদেহ পেতে উদগ্রীব -সৌদি আরবে নিহত হওয়া মহেশখালীর প্রবাসীদের স্বজনরা


এস. এম. রুবেল।। সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ বাংলাদেশীর মধ্যে ২ জনের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায়। তারা কর্মস্থল থেকে ওমরাহ হজ্বে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে। নিহতরা হলেন- শেফাইতুল ইসলাম (২৪) ও আসিফ মোহাম্মদ আফনান (২২)। নিহত শেফাইতুল ইসলাম বড়মহেশখালী ইউনিয়নের বড় ডেইল গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র এবং আসিফ মোহাম্মদ আফনান একই এলাকার পূর্ব ফকিরাঘোনা গ্রামের আহমদ উল্লাহর পুত্র। তারা পরষ্পর সম্পর্কে খালাতো ভাই হয় বলে জানা গেছে।

নিহত শেফাইতুল ইসলামের বাবা কৃষক। বার্ধক্যের কারণে এখন কাজ করতে পারেন না। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। মা হামিদা বেগম মারা যান পাঁচ বছর আগে। ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে শেফাইতুল ইসলাম ৪র্থ। সাইফুল ইসলাম ও শাহজাহান ইসলাম নামে তার অপর দুইভাইও সৌদি প্রবাসী। দেড় বছর আগে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরবে যান শেফাইতুল ইসলাম। সেখানে হামিস নামক স্থানে হোটেলে চাকরী করতেন।

তার ভাই জাহেদুল ইসলাম সাগর জানান, তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তিন ভাই সৌদিতে যাওয়ার পর পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরছিল। এমন সময় এক ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় অন্ধকার নেমে আসে তাদের জীবনে। তিনি আরো জানান, অন্য ভাইদের মাধ্যমে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। তার মরদেহ পুড়ে যাওয়ায় সনাক্ত করা যায় নি। যে বাসে করে ওমরাহ হজ্বে যাচ্ছিল সেই বাসের কাউন্টার থেকে জানতে পারে ওই গাড়িতে তার ভাই শেফাইতুল ইসলাম ও খালাতো ভাই আসিফ মোহাম্মদ আফনান ছিল।

শেফাইতুল ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, “সরকারের কাছে আমার আকুতি। আমি শেষবারের মত আমার ছেলেকে দেখতে চাই।”

অপরদিকে শোকের মাতম চলছে নিহত আসিফ মোহাম্মদ আফনানের বাড়িতেও। তার বাবা ক্ষুদ্র পলিথিন ব্যবসায়ী। হার্টের রোগী হওয়ায় পরিশ্রম করতে পারেন না। ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে আসিফ সবার বড়। বড় বোনের বিয়ে হয়, ছোট বোন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে এবং ছোট ভাই কোরআনে হাফেজ। নিহত আসিফ মহেশখালী আইল্যান্ড হাই স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তারপর রাদিয়া ফ্যাশন নামের কাপড়ের দোকানে চাকরী করে কিছুদিন। এরপর পরিবারের হাল ধরতে প্রায় ২ বছর ৪ মাস আগে পাড়ি জমান সৌদিআরবে। হামিস নামক স্থানে নিয়েছেন হোটেলের কাজ।

তার বাবা আহমদ উল্লাহ বলেন,  “ধার-দেনা করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছি। এখনো সব দেনা পরিশোধ করতে পারিনি। রমজানের খরচের জন্য আমার ছেলে এই মাসের ৫ তারিখ ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল।”

তিনি আরো জানান, যেদিন দুর্ঘটনায় পড়বে তার আগেরদিন রবিবার ইফতারের আগে ফোনে কথা হয়েছিল ছেলের সাথে। তখন সে বলেছিল- “বাবা বাসা থেকে বের হয়ে খালাতো ভাই শেফাইতের বাসায় যাচ্ছি। সেখানে রাতে থাকবো। পরদিন সকালে আমরা ওমরা করতে যাবো। ওই সময় মাকে বলেছিল, “আম্মা আমরা হজে¦ যাচ্ছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”

এদিকে নিহত দুই পরিবারকে সান্তনা দিতে যান মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইয়াসিন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নিহত দুই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের আর্থিক অনুদান দেয়া হবে এবং নিহতদের বিষয়ে প্রশাসনিক ভাবে যা সহযোগীতা লাগবে তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।