বাংলাদেশের অন্যতম স্বনির্ভর খাত লবণ। কক্সবাজারের সব উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বিসিকের পক্ষ থেকে লবণ উৎপাদনে চাষিদের প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদান ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ সার্বিক সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। আর চাষিরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমদানী প্রয়োজন হয়না মত লবণ উৎপাদন করে থাকেন।
চলতি মৌসুমে মোট লবণ চাষকৃত জমির পরিমাণ ৬৬ হাজার ৪২৪ একর। গত বছর ছিল ৬০ হাজার ২৯১ একর। গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণ চাষের জমি বেড়েছে ৩ হাজার ১০০ একর। চলতি লবণ মৌসুমে লবণ চাষির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন। গত বছর ছিল ৩৭ হাজার ২৩১ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর চাষির সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজার ২৩৬ জন।
বিসিক কক্সবাজার অফিসের ডিজিএম জাফর ইকবাল ভূইয়া বলেন, চলতি মৌসুমের এক মাস আগেই চাষিদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামানো হয়। গত মৌসুমে প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয় ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বরে। আর চলতি লবণ মৌসুমে লবণ উৎপাদন শুরু হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবরে। লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদী (১ বছর), মধ্যমেয়াদী (১-৫ বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদী (৫ বছরের উর্ধ্বে) কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সার্বিকভাবে চাষিদের উৎসাহিত করে রপ্তানীর টার্গেট নিয়ে মাঠে নামানো হয়।
বিসিক আরো জানিয়েছে, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আধুনিক পদ্ধতিতে লবণচাষিদের অগ্রিম লবণ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ, লবণ চাষের নতুন এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং সম্প্রসারণ, সহজ শর্তে চাষিদের ঋণ প্রদান, একরপ্রতি লবণ উৎপাদন বাড়ানো, প্রকৃত লবণচাষিদের কাছে বরাদ্দ করা, লবণ চাষের জমির লিজ মূল্য নির্ধারণ, লবণ চাষের জমি সংরক্ষণ, আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনে প্রদর্শনী ও উৎপাদিত লবণের মান নিয়ন্ত্রণে কারিগরি সহায়তা প্রদান, জরিপ পরিচালনা, লবণ চাষ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং লবণ উৎপাদন, মজুদ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
বিসিক সূত্রমতে ৬২ বছরের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন। চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদনের ২৩ লাখ মেট্রিক টন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জানিয়েছে, গত বছর লবণ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। এবারে লবণ চাষের জমি ও চাষি বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় অন্যন্য বছর এই সময়ে যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে এবারে তার অনেকগুণ বেশী লবণ উৎপাদন হয়েছে।
আমদানি নয় দেশে রেকর্ড পরিমান লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও রপ্তানীর লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিসিকের সহায়তায় লবণ চাষি সমিতিগুলো আগেভাগেই এগিয়ে আসে। এতে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় লবণনীতি- ২০২২ অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিসিক লবণ শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ১৯৬১ সাল থেকে বিসিকের মাধ্যমেই দেশে পরিকল্পিতভাবে লবণ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়।
এদিকে মহেশখালীর লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হওয়ায় চাষিরা খুশি।
বিসিকের সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে এবারে বিগত ৬২ বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হতে যাচ্ছে। মৌসুমের আরো এক মাস বাকি আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেশে আমদানি নয় প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করার মতো লবণ উৎপাদন হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। দেশের স্বনির্ভর লবণ খাতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ররপ্তানীর টার্গেটে লবণ উৎপাদনের জন্য চাষীদের প্রশিক্ষণ, ঋণদান ও উদ্বুদ্ধ করণ সহ সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য তিনি বিসিককে এবং সার্বিকভাবে এই লবণ খাতের স্বনির্ভরতা ধরে রাখার জন্য উদ্যোগ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।