Advertisement


সমুদ্রে ট্রলার নিখোঁজের খবরে কান্নার রুল পড়েছিলো কুতুবদিয়ায়ও


রকিয়ত উল্লাহ ও ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ
-কুতুবদিয়া থেকে ।। 

সস্প্রতি কক্সবাজারের নাজিরার টেক এলাকায় একটি ট্রলার থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনার পর বিষয়টি যে সমুদ্রে ঘটা হত্যাকাণ্ড তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ব্যাপক অনুসন্ধানে নামেন এবং ইতোমধ্যে ঘটনা সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। ঘটনার সাথে মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও সোনাদিয়ার বিভিন্ন বাসিন্দা সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অনেকটা খোলাসা হয়ে ওঠেছে। তবে সমুদ্রে এ ঘটনার পর কুতুবদিয়ার জেলে এলাকায়ও কান্নার রুল পড়েছি বলে মহেশখালীর সব খবর এর কাছে তথ্য আসে।

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে আমরা কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল ও লেমশিখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন জেলেবহুল এলাকা পরিদর্শন করি। পরিদর্শনকালে কৈয়ারবিল এর মলমচর এলাকার বিভিন্ন ট্রলার মালিক, মাঝি, ট্রলার ড্রাইভার ও জেলেদের সাথে কথা বলি। এ সময় সমুদ্রে যে সময়টিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো সেই সময়ে সাগরে মাছ ধরার কাজে থাকা কিছু জেলের সাথেও আমাদের দেখা হয়।

এ সময় ওই এলাকার লোকজন সমুদ্রে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে না পারলেও তারা জানান- ওই সময় সমুদ্রে হত্যাকাণ্ডের খবর কুতুবদিয়ার আশপাশের জেলে পল্লীতে এসেছিলো এবং তৎকালে মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া কয়েকজন জেলের খোঁজ না মেলায় তাদের পরিবারে কান্নার রুল পড়েছিলো বলে জানান।

এক পর্যায়ে ওই এলাকার জেলেরা চরের অদূরে নোঙর করা একটি কার্গো ট্রলার দেখিয়ে দিয়ে বলেন- ওই ট্রালারের বাবুর্চির ১৫ বছর বয়সি এক সন্তানও সে সময় নিখোঁজ থাকার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবারে কান্নার রুল পড়ে যায়, ওই ছেলেটি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে এলাকার জনৈক ছাবের মাঝি চালিত বাঁশখালীর একটি বোটে করে সমুদ্রে যায় বলে তারা জেনেছেন মর্মে তথ্য দেন।

পরে নোঙর করা কুতুবদিয়ার নজরুল কোম্পানির মালিকানাধীন ওই ট্রলারে গিয়ে বাবুর্চি মোহাম্মদ হাসান এর সাথে কথা বলি। এ সময় বাবুর্চি হাসান জানান- পরিবারের কাউকে না জানিয়ে তার ছেলে ওসমান গনী(১৫) এলাকার বাচ্চু কোম্পানির মাছধরা ট্রলারে করে সমুদ্রে চলে যায়। পরে সমুদ্রে 'জেলেদের'কে পিটিয়ে ও ট্রলারের কোন্ড স্টোরেজ (বরফ বক্স) বন্দি করে খুন করা'র খবর আসে কুতুবদিয়া উপকূলে। সমুদ্র থেকে ফেরা অন্যজেলেদের মারফতে তারা এ খবর পায়। ওই 'খুন হওয়া জেলে'দের দলে তার সন্তান ওসমান গনীও আছে বলে তারা জানতে পারে। এ নিয়ে পড়ে যায় কান্নার রুল। আমাদের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে।

পরে আমরা দক্ষিণ লেমশিখালী ইউনিয়নের শাহহাজি পাড়া এলাকায় পৌঁছে সেই কিশোর ওসমান গনীকে খুঁজে বের তার সাথে কথা বলি। ওই কিশোর জানায়- সমুদ্রে মাছ ধরা দেখতেই সে মূলতঃ পরিবারের কাউকে না জানিয়ে মাছধরা ট্রলারে উঠে যায়। ওসমান এক সময় পড়ালেখা করতো, এখন স্কুলে যায় না। এক পর্যায়ে ওসমানদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা ও প্রতিবেশীদের সাথেও। তারা জানান- মূলত: সমুদ্রে মৃত্যু হওয়া এক জলদস্যুর সাথে নাম মিলে যাওয়ায় ওসমানও মারা গেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে, পরে সমুদ্র থেকে ফিরে আসা অন্য জেলে নৌকাগুলো থেকে তার বেঁচে থাকার খবর জেনে তারা বাড়িতে স্বস্তিমূলক সিন্নি দেয়।

এ সময় কথা হয় প্রতিবেশী শামসুল আলম এর সাথেও। শামসুল জানান- সমুদ্রে যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেটা সমুদ্রে থাকা অবস্থায় ওসমান গনী ও তাদের ট্রলারের লোকজন জানতোও না, উপকূলে ফেরার পর অন্যদের মতো তারা তা জেনেছে মাত্র। ওই কিশোর মনের আগ্রহ থেকে সমুদ্রে মাছ ধরা দেখতে গেছিলো এবং সে সমুদ্রে কোনো প্রকার অপরাধের সাথে যুক্ত নয় বলে দাবি করেন তিনি৷

এদিকে আমরা কুতুবদিয়ায় অনুসন্ধান শুরুর আগে একটি বাঁশখালীর ট্রলার ও কুতুবদিয়ার মাঝি-মাল্লাদের বিষয়ে খবর পেয়েছিলাম। একজন পুলিশের লোকের মালিকানাধীন সেই ট্রলারে করে এই কিশোর সমুদ্রে গিয়েছিলো বলে কুতুবদিয়ার এই এলাকার আশাপাশের জেলেরা জানালেও ওই কিশোর ও তার পরিবারের সদস্যরা বাঁশখালীর সেই ট্রলারে নয়- এলাকার জনৈক বাচ্চু কোম্পানির ট্রলারে করেই ওসমান সমুদ্রে যায় বলে জোর দাবি করেন।

এর পর আমরা ফের বাঁশখালীর সেই ট্রলার নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি।।