গেল শতাব্দীর ৬০ দশকের দিকে অর্থাৎ ১৯৬০ সনে কক্সবাজারের উপকূল কুতুবদিয়া দ্বীপের উপর বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে কয়েকটি গ্রাম বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে যায়। (তন্মধ্যে আজম কলোনীতে বসবাসরত লোকজনও ছিলো) তখনই বড়ঘোপ বাজারের পশ্চিমে বসবাসরত দুই গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি জোয়ারের স্রোতে ভেসে গেলে প্রায় ৫শ মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়েন।
সেই সময়কালের বড় ধরণের ঘূর্ণিঝড়। তখন তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না বললে চলে, বার্তা মাধ্যম ছিল শুধু মাত্র টেলিগ্রাম। টেলিগ্রামের মাধ্যমে জানতে পেরে তৎসময়ের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান কুতুবদিয়া ঘূর্ণি দুর্গত মানুষদের দেখতে ছুটে আসেন। গৃহহারা ঘূর্ণিদুর্গত মানুষের আহাজারী দেখে গভর্নর আজম খান তাদের পুনবাসনের জন্য কক্সবাজার মহকুমার প্রধানকে নির্দেশ দেন। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরী করে বড়ঘোপ মৌজার আরএস ৫৫১৪ দাগের ৩০.২০একর সরকারি পরিত্যক্ত জায়গার উপর গৃহহীন পরিবারকে পুনবাসন করে। তখনই গভর্নর আজম খানের নামেই গ্রামটির নামকরণ করা হয় আজম কলোনী। ধুধু বালি আর লবণাক্ত মাটিতে কায়িক পরিশ্রম করে নিজেদের ঘরবাড়ি স্থাপন করে বসবাস শুরু করে গৃহহীন মানুষ। বর্তমানে এই গ্রামে ষষ্ঠ প্রজন্ম পর্যন্ত চোখে পড়ে। প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রজন্ম অধিকাংশ মারা গেছেন। এ গ্রামের মানুষকে সরকারিভাবে পূনর্বাসন করায় সেই সময়ের সরকার তাদের দখলকৃত ভূমির খাজনা মওকুফ করে দেয়। যে যেই অবস্থানে থেকে শৃংখলভাবে বসবাস করে আসছে।
১৯৭১ সনে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রনালয় জরীপ বা সার্ভে কাজ শুরু হলে এ গ্রামে যার যত জমি ভিটি দখলে আছে তা দাগ এবং পরিমাপ ট্রেস ম্যাপ অনুপাতে দাগ সৃষ্টি করে এবং স্ব-স্ব দাগের জমির এরিয়া,শ্রেণীবিন্যাস নির্ধারণ করে ১নং খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করে। এ গ্রামের মানুষ সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও বিগত ৫৫ বছর ধরে স্ব স্ব দখলীয় জমির মালিক হতে পারেনি। সরকারের নিকট এলাকার বাসিন্দারা অনেকবার জেলা প্রশাসক, সহকারি কমিশনার ভূমি বরাবরে বন্দোবস্তির আবেদন করে কোন প্রতিকার পাননি। এখন এ গ্রামের মানুষের নামে বসতভিটির খতিয়ান না থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না। কিন্তু এ গ্রামের মানুষের এনআইডি কার্ড হাল নাগাদ, জাতীয়, স্থানীয় নির্বাচনে ভোট প্রযোগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে থাকেন এলাকার লোকজন।
এছাড়াও হোল্ডিং ট্যাক্স, চৌকিদারী ট্যাক্স থেকে শুরু করে যাবতীয় সরকারি সকল ধরণের কর আদায় করে আসছে গ্রামের জনগণ। সরকারি বরাদ্দে রাস্তাঘাট উন্নয়ন হচ্ছে। এ গ্রামের মানুষের আর্থিক অনুদানে নান্দনিক সৌন্দর্য বর্ধন দুটি মসজিদ নির্মাণ করে। এ গ্রামে যুগ যুগ ধরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় সম্প্রতি সিটি শহরের আদলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে (ইএমসিআরপি) প্রকল্পের আয়তায় পাইপড ওয়াটার স্কীম সুপেয় পানীয় জলের সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান বলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া নিশ্চিত করেন।
আজম কলোনী গ্রামে প্রবীন বাসিন্দা সৈয়দুল ইসলাম বলেন- বিদ্যুতের অভাবে উদ্যোক্তারা ছোট্ট, মাঝারি শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলতে পারছে না। কুতুবদিয়ায় সাব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থল আজম কলোনী গ্রামের পাশে। এ গ্রামের উপর দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের লাইন গেলেও গ্রামবাসী বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। কথায় আছে চেরাগের নীচে অন্ধকার থাকে। এ গ্রামের মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য যে কোন বিপদ আপদে একে অপরের উপকারে আসে। যার ফলে কোন ধরণের মামলা মোকাদ্দমা নেই বললে চলে।
আজম কলোনী ঝিনুক সংঘের সদস্যদের উদ্যোগে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ধর্মীয় সংস্কৃতি, বনায়ন কাজে জড়িয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এসব আচার আচরণে আজম কলোনী গ্রামকে ভূমিহীন আদর্শ গ্রাম হিসেবে সম্মোধন করে।