মাতারবাড়ির একাধিক লবণ চাষী বলেন, ইউনিয়নের পশ্চিম ঘোনা অর্থাৎ কানকাটি ঘোনার লবণ চাষীদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান আবু হায়দারের ভাই কেফায়েত প্রতি মণ লবণে ট্যাক্স নিচ্ছে ৩ টাকা আর বিএনপির নেতা আব্দুল খালেক এর ছোট ভাই গোরা মিয়া ডিউটি ও গুদি ভাড়ার নামে টেক্স নিচ্ছে প্রতি মণে ২ টাকা।
এছাড়াও মাতারবাড়ি দোনার ঘোনার লবণ চাষীদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের নাম দিয়ে মোরশেদ ও আব্দুল গফফার টেক্স নিচ্ছে প্রতি মণে ৩ টাকা। রুস্তম আলী গুদি ভাড়ার নামে টেক্স নিচ্ছে প্রতি মনে ১ টাকা এবং বদরুদ্দিনের ভাই কামাল উদ্দিন ও মামুন ডিউটির নামে টেক্স নিচ্ছে ২ টাকা।
আঠারো দুইন্না ঘোনা ও ফার্ম ঘোনায় চেয়ারম্যানের নামে লবণ চাষীদের কাছ থেকে টেক্স নিচ্ছে প্রতি মণে ৩ টাকা। বদরুদ্দিনের জ্যাঠাতো ভাই একরাতুল্লা গুদি ভাড়ার নামে টেক্স নিচ্ছে ২ টাকা। বদরুদ্দিনের ভাতিজা আরমান ডিউটি টেক্স নামে নিচ্ছে প্রতি মনে ২ টাকা।
সব মিলিয়ে মাতারবাড়ির এই সিন্ডিকেট কানকাটি ঘোনার লবণ চাষীদের কাছ থেকে প্রতি মনে ট্যাক্স নিচ্ছে ৫ টাকা, দোনার ঘোনার লবণ চাষীদের কাছ থেকে টেক্স নিচ্ছে ৬ টাকা, আর আঠারো দুইন্না ও ফর্ম ঘোনার লবণ চাষীদের কাছ থেকে টেক্স নিচ্ছে ৬ টাকা। লবণ চাষিরা খুবিই জুলুমের শিকার হচ্ছেন বলে জানায় তারা।মাতারবাড়িতে সরেজমিনে গিয়েও এমন চিত্র দেখা গেছে।
এব্যাপারে মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু হায়দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে চাঁদা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে টেক্স নিচ্ছে না গুদি ভাড়া বাবদ টাকা নেয়। তবে সেটা লবণ মণ প্রতি ৫/৬ টাকা হওয়ার কথা নয়। ২/৩ টাকা করে নিচ্ছে। সে টাকা সরকারি রাজস্ব কোষাগারে টেক্স হিসেবে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে কোন মাধ্যমে সেটা টেক্স হিসেবে সরকারি রাজস্ব কোষাগারে যাচ্ছে সে ব্যাপারে সদোত্তর দিতে পারেনি তিনি। এই সিস্টেমটা মাতারবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নাই। মহেশখালীতে দায়িত্বরত নৌবাহিনী সূত্রে জানা যায়, এরকম কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নাই। তবে চাষীদের থেকে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। মহেশখালীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সহ নানান অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত অবস্থান ও অপরাধ দমনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারা এই বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, লবণ আমদানি নয়, রফতানির লক্ষ্য নিয়ে আগাম মাঠে নামছে ৫০ হাজার লবণ চাষি। বাংলাদেশে শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলায় ৯০ ভাগ ও ১০ ভাগ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মোট ৯০০ বর্গ কি.মি. উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদন হয়। যা দিয়ে গোটা দেশের লবণের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। লবণ উৎপাদন হতে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এ শিল্পের সাথে জড়িত এবং এই লবণ শিল্প জিডিপিতে প্রায় ১০ ভাগ অবদান রেখে আসছে। কক্সবাজার জেলা এবং বাঁশখালীতে প্রায় ৫০ হাজার লবণ চাষিসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এবং অত্র এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ লবণ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। অত্র অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করে লবণ চাষের উপর। এই মৌসুমে ৫০ হাজার লবণ চাষি আগাম মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে মাঠ পর্যায়ে লবণ বেচা-কেনাও অনেক কম, দামও গত বছরের চেয়ে মণপ্রতি প্রায় ২০০ টাকার ও কম। এই বিক্রয় মূল্যে উৎপাদন খরচ তুলাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লবণ চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।