দেখা গেছে- চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে পাঠদান করছেন দুইজন শিক্ষক। দুই শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ইতোমধ্যে স্কুলটি থেকে অন্যত্র বদলীর আদেশ পেয়েছেন। বদলী হলেও নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে- শিক্ষক সংকটের কারণে তিনি এখনও পাঠদান করে যাচ্ছেন স্কুলটিতে। অন্যজন এখানে প্রেষণে শিক্ষকতা করার কথা রয়েছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কার্যতঃ এখানে নিয়মিত প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ী শিক্ষক নাই একজনও।
জানা গেছে- সরকারী ভাবে এ বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র একজন স্থায়ী শিক্ষক। রহস্যজনক বিষয় হলো- গত ১ বছর ধরে বিনানুমতিতে তিনিও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক (অস্থায়ী) বিদ্যালয়ে পাঠদান করলেও গত ২ মাস ধরে তিনিও আর আসছেন না বিদ্যালয়ে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন- ১৯৮৮ সালে সোনাদিয়ার পূর্বপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকসংকটে ভুগছে।
বিদ্যালয়টির আশপাশের সচেতন বাসিন্দারা জানান- গত ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালে এ স্কুলটির জন্য একাধিক দফায় শিক্ষক নিয়োগ হলেও এ স্কুলে কেবল ১ জন শিক্ষককেই পদায়ন করা হয়েছে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না। ফলে ১২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে স্কুলটিতে কেনো স্থায়ী শিক্ষক নেই। দুই মাস আগে অন্য একটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষককে প্রেষণে এখানে নিয়োগ দেওয়া হলেও আগামী ডিসেম্বর মাসে তার প্রেষণে সংযুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে, ফলে ডিসম্বরের পর থেকে তিনিও আর স্কুলে থাকবেন না। এ অবস্থায় চূড়ান্ত ভাবে শিক্ষক বিহীন হয়ে পড়বে বিদ্যালয়টি।
একাধীক সূত্রে জানা গেছে- বিদ্যালয় ও চাহিদার তুলনায় শিক্ষকের তীব্র সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এ দ্বীপে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে অন্ততঃ ৩টি বিদ্যালয়। কুতুবজোমের এই সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও হোয়ানকের ডেইল্যাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধলঘাটা ইউনিয়নের শরইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে মাত্র একজন করে শিক্ষক। একই ইউনিয়নের মুহুরিঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন শিক্ষক, যা শিক্ষার্থী ও চাহিদার তুলনায় অনেক অপ্রতুল।
সোনাদিয়ার এ স্কুলটিতে গিয়ে কথা হয় সদ্যবদলী হওয়া প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোক্তার আহমদ এর সাথে। তিনি জানান- "আমি বদলী হওয়া সত্ত্বেও কোন শিক্ষক না থাকায় টানা দশ মাস কোনো রকমে বিদ্যালয়ের পাঠদান চালাচ্ছি, প্রতিদিন নৌপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এমন সংকটের পটভূমিতে ৩ মাসের জন্য প্রেষণে একজন সহকারী শিক্ষক এসেছেন। কোনো কোনো সময় দাপ্তরিক কাজে আমাকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতে হলে ২ পর্বে পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান চালাতে হয় তাঁকেই। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে তিনিও চলে গেলে কোনো শিক্ষকই আর থাকবে না এ স্কুলে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন- "শিক্ষক সংকট নিরসনকল্পে গত মাসে সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেষণে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দ্বীপের আরও ২টি স্কুলেও মাত্র একজন করে শিক্ষক কর্মরত আছেন, একটি বিদ্যালয়ে রয়েছে মাত্র ২ জন শিক্ষক। এভাবে নিয়মিত পাঠদান চালানো মোটেও সম্ভব নয়। তাই সামনে শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের বেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সোনাদিয়া, ডেইল্যাঘোনা, শরইতলা, সাপমারার ডেইল ও মুহুরিঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে অবগত ও অনুরোধ করবো। আশা করি দ্রুত সময়ে শিক্ষক সমস্যা নিরসন হবে।"