Advertisement


কক্সবাজার কারাগারে ফিরেছে শৃঙ্খলা


বিশেষ প্রতিবেদক।।
রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ' স্লোগানকে যথাযথ ভাবে ধারণ করে কক্সবাজার জেলা কারাগারের ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিশেষত ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে বন্দি সাক্ষাৎ, বন্দিদের খাবারের মান, বন্দির স্বজনদের সাথে মোবাইলে কথা বলা, বন্দিদের জামিন খালাস, চিকিৎসা, বিনোদনসহ কারাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়। জামিনপ্রাপ্ত একাধিক বন্দি, বন্দির স্বজন, দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কারা কর্তৃপক্ষও বলছেন- কারাগারে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখি কাজ করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো জানাচ্ছেন- কারা প্রশাসনের কঠোরতায় কারা অভ্যন্তরে মাদক কারবার নেই বললেই চলে। বন্ধ করা হয়েছে কারাভ্যন্তরে নগদ টাকা ব্যবহারও। কারা ক্যান্টিনে নির্ধারিত মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে পিসির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে কারাক্যান্টিন থেকে মালামাল ক্রয় নিশ্চিত করা হচ্ছে। কারা ক্যান্টিনে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কারারক্ষী বাছাই ও নিয়োজিত করায় শতভাগ স্বচ্ছতা এসেছে। খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিমাণ নিয়মিত তদারকি এবং পরীক্ষার পর বন্দিদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্দিদের আসন বন্টন, আবাসন ব্যবস্থায় হয়রানী বা অর্থের লেনদেনও বন্ধ বলে জানান সম্প্রতি কারামুক্ত হওয়া একাধিক ব্যক্তি। কারাগারের সাম্প্রতিক মান নিয়ে সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন সদ্য জামিনে কারামুক্ত হওয়া বেশ কয়েকজন জেল ফেরত ব্যক্তি। তাদের মতে- কক্সবাজার জেলা কারাগারে বেড়েছে মান, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও কারাবন্দিদের জন্য সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা।

গতকাল মঙ্গলবার আদালত থেকে জামিন আদেশের পর কারাগার থেকে মুক্তি পান কক্সবাজারের ঈদগাহ ইসলামপুরের বাসিন্দা মো. শাজাহান, ঢাকা কামরাঙ্গি চরের বাবুল মিয়া, চকরিয়ার রাশেদ সিকদার পাড়ার ইমরুল, রামুর সলিমুল্লা ও টেকনাফের বাসিন্দা খোরশেদ আলম।কারাগারের বর্তমানে উন্নত পরিস্থিতির জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।

বিভিন্ন সময় একাধিকবার করাগারে গিয়ে মুক্ত হওয়া বন্দিরা তুলনামূলক বিবেচনায় জানান- বিগত সময়ের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে কারা অভ্যন্তরে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। নতুন জেল সুপার মো. জাবেদ মেহেদী ও জেলার আবু মুছার তদারকির কারণে কারাগারে খাবারের মানও বেড়েছে বলে দাবি তাদের। তারা বলেন, জেল সুপার ও জেলার নিজেরাই নিয়মিত খাবারের মান-পরিমাণ তদারকি করে এবং প্রতিদিনের খাবারের স্বাদ নিজে পরীক্ষা করে বন্দিদের সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। তাদের অনুপস্থিতে অধ্বঃস্তন কর্মকর্তাগণ খাবারের মান পরীক্ষা করে বন্দিদের মাঝে বন্টন করেন। অধিকাংশ সময় জেল সুপার ও জেলার নিজে উপস্থিত থেকে খাবার বন্টন তদারকি করে থাকেন। বন্দিরা কারা কর্তৃপক্ষের এ আন্তরিক সেবাই মুগ্ধ।

জেল ফেরত মো. শাহজাহান ও বাবুল মিয়া জানান- বন্দিদের সরকারি মোবাইল বুথে কথা বলার ক্ষেত্রে এখন ফিরে এসেছে পূর্ণশৃঙ্খলা। প্রতিটি বন্দি পিসি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ১ টাকা ব্যয় হিসেবে সপ্তাহে ১ দিন সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলতে পারেন। কারাভ্যন্তরে নগদ  টাকার কোনো ব্যবহার নেই। ফলে সকল বন্দি সমানভাবে মোবাইল ফোনে পরিবার ও স্বজনের সাথে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন।

কক্সবাজার কারাগারের বন্দি মো: শাজাহানের স্ত্রী বলেন- আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে কারান্তরিণ। মাসে একবার করে তাকে দেখতে আসতাম। সকাল হতে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গরমের কারণে দর্শনার্থী ঘরে বসা যেতো না। কিন্তু এ মাসে গিয়ে দেখেছি ভিন্ন চিত্র। দর্শনার্থী ঘরে উন্নতমানের সিলিং ফ্যান ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বড় টেলিভিশন ও ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্দি সাক্ষাতের সিরিয়াল আসতে আগে বিরক্ত লাগলেও এখন অপেক্ষা করার বিষয়টি বিরক্তি সৃষ্টি করে না।

কারাগার এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়- কারাঘারে আসা ও মুক্ত হওয়া বন্দিদের সাথে মানবিক ও ভালো আচরণ করা হয়। তাছাড়া কারাগার এলাকায় আসা বন্দিদের স্বজনের সাথেও ভালো ব্যবহার করছেন কারারক্ষীগণ। পাশাপাশি আদালত কর্তৃক জামিন প্রাপ্তদের খালাস প্রক্রিয়ায়ও কোনো হয়রানি নেই। প্রতিদিন জামিনপ্রাপ্ত বন্দিদের নাম কারা ফটকের সামনে এলইডি ডিসপ্লের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে- বন্দিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এখন সকলেই আন্তরিক। ফলে কারাগারে সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতাল কেন্দ্রিক সুচিকিৎসা ও সেবার মানও বেড়েছে। তাছাড়া হাসপাতালে অসুস্থ বন্দিদের আসন বন্টন, আবাসন ব্যবস্থায় নাই কোনো হয়রানি বা অর্থের লেনদেন। বন্দিদের বিনোদনের জন্য ভেতরে উন্মুক্ত স্থানে টেলিভিশনের বড় পর্দা সংযোজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বন্দিদের প্রতিদিন বিকালে ১ ঘন্টা করে মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম চালু রয়েছে এবং বন্দিদের বিনোদনের জন্য নাটক, গান, ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দিদের সকল কাজে নিশ্চিত করা হচ্ছে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন। ফলে কক্সবাজার জেলা কারাগারের বর্তমান কার্যক্রম প্রশংসিত হচ্ছে সর্বমহলে।

কারা সুত্রে জানা গেছে- কারা কর্তৃপক্ষ সুশাসন নিশ্চিত করতে গিয়ে অপরাধে জড়িত কর্মচারীদের বিধি মোতাবেক আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি প্রদানের কারণে কতিপয় অসাধু কর্মচারী উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারও প্ররোচনায় পড়ে কারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য ছড়াচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে কক্সবাজার জেলা কারাগারের চলামান সুন্দর কারা ব্যবস্থাপনার এ ব্যবস্থা ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন তারা।

সূত্র জানিয়েছে- গত ২৩ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা কারাগারে জেল সুপার হিসেবে মোঃ জাবেদ মেহেদী যোগদানের পর থেকে বন্দিদের জন্য বিধি মোতাবেক শতভাগ প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ১২ দশমিক ৮৬ একর আয়তনের এ কারাগারে ধারণ ক্ষমতার অধিক বন্দি থাকলেও কর্তৃপক্ষের সুচারু ব্যবস্থাপনায় অল্প সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।  

কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মোঃ জাবেদ মেহেদী বলেন- কারাগারে বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা ছিলো সেহেতু আমি যোগদানের পর প্রথমে নজর দিয়েছি শৃংখলা ফেরানোর কাজে। বন্দিদের স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও দর্শণার্থীদের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাল ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ তা তদারক করা হচ্ছে। বন্দিদের বিনোদনে ভিতরে উন্মুক্ত স্থানে এলইডি বড় মনিটর সংযোজন করে নাটক, গান ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়। সেখানে প্রতিদিন বিকালে ১ ঘন্টা করে মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দীদের সকল কাজে নিশ্চিত করা হচ্ছে স্বচ্চতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন।