Advertisement


মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর এলাকায় নাশকতামূলক আগুন, পুড়িয়ে দেয়া হয় নির্মাণ যন্ত্রপাতি


মাহবুব রোকন

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি-ধলঘাটা এলাকায় নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দর এলাকায় গভীর রাতে নাশকতামূলক ভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী পুড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় দোসররা এ কাজ করেছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ২৫-৩০ জনের এক দল দুর্বৃত্ত নিরাপত্তা প্রহরীদের বেঁধে রেখে নির্মাণ সামগ্রী লুটপাট ও সরঞ্জামে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অন্তত: সাড়ে চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। স্থানীয় প্রশাসন বলছে- তারা বিষয়টি নিয়ে গভীর ভাবে কাজ করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বন্দরের উন্নয়ন কাজে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বর্তমানে মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাগোয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন কাজ চলছে জোরেশোরে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ বাচ্চু এ সব কাজ তদারকি করলেও গত ৫ আগস্টের পর সরকারের পটপরিবর্তন হলে তিনি অবৈধ বন্দুকসহ নৌবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন ও জেল হাজতে যান। এর পর তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর পদও হারান। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হলেও বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। এক পর্যায়ে বন্দরের উন্নয়ন কাজের তদারকির দায়িত্বও চলে আসে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত স্থানীয় লোকজনের হাতে। এ অবস্থায় পলাতক বাচ্চু চেয়ারম্যান এর কয়েকজন ভাই ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজন বন্দর উন্নয়ন কাজের সাথে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের কাজ না করে এলাকা থেকে চলে যাওয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বসে এ চক্রটি। বুধবার বাচ্চু চেয়ারম্যান এর ভাইগণ ও আওয়ামী লীগের লোকজন এসে চাঁদার দাবিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রকৌশলী ও অন্যদের হুমকি দিয়ে যায় এবং তা না হলে কাজ গুটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য বলে। এতে ঠিকাদারের লোকজন সরে না আসায় গভীর রাতে শ্রমিকদের শেডে লুটপাট চালিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রাত ২টার দিকে ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ৬জন প্রহরী। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া লোকজন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। ধলঘাটার বন জামিরাঘোনার হামিদখালী এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা শেড (অস্থায়ী বাড়ি) করে তাদের কাজ চালিয়ে আসছিলেন, রাতে ২৫ থেকে ৩০ জনের একদল সন্ত্রাসী এসে নিরাপত্তা প্রহরীদের বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে রেখে শেডে লুটপাট চালায়, পরে যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টি করে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে এখানে কাজের তদারকিতে থাকা একজন ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বিএনপি সমর্থিত জমির হোসেন। তিনি জানান- ‘‘ঘটনার সাথে যুক্ত সকলই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর। আওয়ামী লীগের বাচ্চু চেয়ারম্যানের ভাই ও তাদের লোকজন এসে শ্রমিকদের শেডে লুটপাট চালায়, এ সময় নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, আসবাবপত্র ও জেনারেটর লুটপাট করে নিয়ে শেডটি ভাঙচুর করে। তারা ৪টি খননযন্ত্র ও ৩টি পাওয়ার টিলারে আগুন লাগিয়ে পুড়ে দেয়। তারা যাওয়ার সময় মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপুল সংখ্যক বেশি জিও ব্যাগ, ক্যাবল ও লাইটিং সিস্টেম লুট করে নিয়ে যায়। যার সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৪ কোটি টাকারও বেশি’’ তিনি এ ঘটনায় যুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।

মাঠ পর্যায়ে কাজে নিয়োজিত শাকিল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদও অনুরূপ ঘটনার বিবরণ দেন এবং এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেন।

ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাহার ইকবাল দাদুল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- ঘটনা জানার পরপরই তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে জানান। পরে পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।

মহেশখালীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক ত্রিপুরা জানান- ইউএনও’র মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একজন তহসিলদারকে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত জানানো যাবে।

এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্লাহ জানান- তিনি বিষয়টি জানার পর মহেশখালী থানা পুলিশকে অবহিত করেছেন, পুলিশ বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান- হামলা ও আগুন দেওয়ার বিষয়টি তারা জেনেছেন। এ নিয়ে করণীয় ঠিক করতে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টিম মাতারবাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশ বিকেলে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন থেকে এ ঘটনায় নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করার পাঁয়তারা হচ্ছে বলে দাবি করা হয় এবং এ ধরণের ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।