মাহবুব রোকন ⬤
মহেশখালীর ধলঘাটায় গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকার উন্নয়ন কাজে নাশকতামূলক আগুন দেওয়ার ঘটনায় বাচ্চু চেয়ারম্যান ও ধলঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক পুতুসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অপরদিকে ঘটনার পরদিন রাতেই ওই এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্রসহ ৬ জলদস্যুকে গ্রেফতার করেছে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। এ অভিযানের ঘটনায় কোস্ট গার্ড বাদি হয়ে আরও একটি মামলা করেছে মহেশখালী থানায়।
জানা গেছে- নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড যৌথ আভিযানিক দল বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের মুহরীঘোনা সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জলদস্যুকে হাতেনাতে আটক করেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১২ রাউন্ড তাজা গুলি, ২৩টি দেশীয় অস্ত্র এবং নগদ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। যৌথ বাহিনীর দাবি- আটককৃতরা জলদুস্যু। দস্যুতার প্রস্তুতিকালে তাদের আটক করা হয়।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোস্ট গার্ড জানায়- মহেশখালীর গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় নির্মাণ যন্ত্রপাতিতে আগুন দেওয়া ও লুটপাটের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। এতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল কলিমউল্লাহ বাহিনী। অস্ত্র প্রদর্শন করে জমিদখল, চাঁদাবাজি, সরকারি সম্পদ ধ্বংসসহ অন্যান্য অপরাধ করে আসছিল তারা। বিষয়টি নিয়ে কোস্ট গার্ডের দ্বারস্থ হন স্থানীয়রা। এর প্রেক্ষিতে ওই এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কলিমউল্লাহ বাহিনীর সদস্যরা ধলঘাটা ইউনিয়নের মুহরীঘোনা সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন খবরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী ওই এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ৬ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয়। আটকের পর তাদেরকে কোস্ট গার্ডের চট্টগ্রাম অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় ও পরে রাতে তাদেরকে মহেশখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়।
রাতে মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) কাইচার হামিদ জানান- রাতে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রসহ আটক ৬ জনকে মহেশখালী থানায় হস্তান্তর করেন কোস্ট গার্ড। এ ঘটনায় কোস্ট গার্ডের এক সদস্য বাদি হয়ে আটক ৬জনের নাম উল্লেখ করে আরও কয়েকজন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করেছেন।
অপরদিকে ধলঘাটার গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় বন্দরের উন্নয়ন কাজে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শেডে লুটপাট ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মহেশখালী থানায় মামলা করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী থানার ওসি কাইচার হামিদ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ধলঘাটার উত্তর মুহুরীঘোনা এলাকার বাসিন্দা শহীদুল্লাহ বাদি হয়ে করা এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যাহার হওয়া চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু। মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে ধলঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম পুতুকে। তাছাড়া বাচ্চু চেয়ারম্যান এর ভাই কলিম উল্লাহসহ তার একাধিক ভাইকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিচালক কমডোর কাওছার রশিদ (ই, পিএসসি, বিএন) গণমাধ্যমকে জানান- ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অফিস ও রেস্ট হাউস নির্মাণের কাজ করছিল। দুর্বৃত্তরা সেখানে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং এর পেছনে কারা জড়িত তা দ্রুতই উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।’