এ ঘটনায় আনুমানিক ৫ কোটি টাকার হয়েছে বলে দাবি করেন ঠিকাদারের লোকজন। তবে গভীর রাতে রহস্যজনক দেওয়া এই অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাব কন্ট্রাকে কাজ পাওয়া ঠিকাদারের সাথে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে পরস্পরের দ্বন্দ্ব ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য জানা গেছে। স্থানীয় ধলঘাটার ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আতাহার ইকবাল দাদুল ও ইউপি মেম্বার জমির উদ্দিন এর সমন্বয়ে নেওয়া সাব ঠিকাদারি কাজে ধলঘাটার বেড়িবাঁধের পাশ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় গ্রামবাসী সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে তাদের বাড়িঘর রক্ষার্থে বাঁধা দেওয়ায় প্রতিবাদ কারীদের দমাতে সাবকন্ট্রাকে কাজ নেওয়া ঠিকাদারের লোকজন গাড়ি পরিয়ে এহেন ঘটনার অবতারণা করেছে মর্মে ঘটনাস্থলের পাশে ধলঘাটার মুহুরী ঘোনায় তাৎক্ষণিক আয়োজিত এক মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল সংলগ্ন বন্দর চ্যানেল রক্ষা বাঁধের ডাইক নির্মাণের কাজ পান তাজ এন্টার প্রাইজ ও জাহানারা ট্রেডিং কোং নামে ২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাজ এন্টার প্রাইজ থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ পান স্থানীয় আইটি এন্টারপ্রাইজ ও জাহানারা ট্রেডিং কোম্পানী থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ পান শাকিল এন্টার প্রাইজ নামের আরও একটি সাব কন্টাকটারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় আইটি এন্টারপ্রাইজ কাজ পেয়ে ৩টি সেভেন পাওয়ার স্কেভেটর, ৪টি পাওয়ার টিলার ভাড়া করে ধলঘাটা চরে নিয়ে যায়। একই ভাবে স্থানীয় ঠিকাদার শাকিল এন্টারপ্রাইজ ও ১টি সেভেন পাওয়ার স্কেভেটর, জেনারেটর ও ড্রেজার মেশিন ভাড়া করে ধলঘাটা চরে নিয়ে যায়। ২ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিলে গত ২২ জানুয়ারী বিকালে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করেন। তারা অবৈধভাবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধের সংলগ্ন জায়গা থেকে শতশত জিও ব্যাগ নিয়ে বালি ভর্তি করার সময় স্থানীয়রা কাজে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসেও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কাজে বাঁধা দেন। ফলে বালি ভরা শত শত জিও ব্যাগ ঠিকাদারের লোকজন রাতারাতি সরিয়ে নেয়।
কিন্তু রাত দেড়টায় কে বা কারা কাজে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ড ও গাড়ি চালকদের চোখে মুখে কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখে হাতপা বেঁধে স্কেভেটর,পাওয়ার টিলার ও বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সব কিছু আগুনে পুঁড়ে ছাই হয়ে যায় বলে ঠিকাদারের লোকজন অভিযোগ করেন। তারা বলেন স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে ধলঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক নুরুল আলম পুতুর নেতৃত্বে উত্তর সুতরিয়া ও মহুরিঘোনা এলাকার লোকজন তাৎক্ষণিক ভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে তাঁরা দাবী করে বলেন, রাতের আঁধারে কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা ঠিকাদারের লোকজনই অবগত আছে। কিন্তু একটি প্রতিপক্ষ এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে এবং অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কাজে বাঁধা দেওয়া উত্তর সুতরিয়ার নিরীহ লোকজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দমানোর ষড়যন্ত্র স্বরূপ এই ঘটনার মিথ্যে অবতারণা করেছে।
দ্বীপ এলাকায় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে কোনো ধরনের বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোরশেদ। তার অভিযোগ, কোনো কোম্পানিই এই কাজের জন্য তাদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেয়নি। এই অবৈধ কার্যকলাপের তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, বন্দর কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করা হবে যাতে তারাও তাদের এলাকার বালু উত্তোলন কার্যক্রম মনিটর করতে পারে।
মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রাইটন দেব জানিয়েছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ বা বালি উত্তোলন সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে এই ঘটনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত শুরু করেছেন।
মহেশখালী থানার ওসি কাইসার হামিদ মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদে তার নাম উল্লেখ করে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। সংবাদটিতে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রকল্পে স্কেভেটর গাড়ি পুড়ানোর বিষয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেছেন। ওসি কাইসার হামিদ জানিয়েছেন যে, তিনি এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি এবং এ ধরনের কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, অবৈধ বালি উত্তোলন এবং প্রকল্পের গাড়ি পুড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।