Advertisement


মহেশখালীতে গভীর রাতে প্রেমে বাধা দেওয়ায় পানচাষিকে পিটিয়ে খুন, তরুণীর বাবাসহ আটক ৫

 


মাহবুব রোকন।। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে একটি বখাটে চক্রের হামলায় নুরুন্ নবী নামের এক পানচাষি খুন হয়েছে, ঘটনায় আহত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন। নিহত ব্যক্তি ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজ পাড়া এলাকার জনৈক মোহাম্মদ ফরিদ আলম এর পুত্র। বুধবার রাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আসা মো. সাগর নামের এক ব্যক্তির সাথে ওই গ্রামের এক তরুণীকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দুইজনকে আটক করে তরুণীর বাবা-মার কাছে তুলে দেন। পরে সাগর দলবল নিয়ে এসে হামলা চালায়, হামলায় ঘটনাস্থলেই ওই নুরুন্ নবী নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ তরুণীর বাবাসহ ৫জনকে আটক করেছে।

জানা গেছে- দক্ষিণ মাইজ পাড়া এলাকার এক তরুণীর সাথে একই ইউনিয়নের সিপাহীর পাড়া এলাকার এক যুবকের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, সে সম্পর্কের সূত্র ধরে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই যুবক গোপনে তরুণীর সাথে দেখা করতে আসে। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাজারের লোকজন ও তরুণীর আত্মীয়-সজনরা বিষয়টি টের পায়। এক পর্যায়ে গ্রামের সড়কের কাছে তরুণীর সাথে ওই যুবককে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাদের আটক করে স্থানীয়রা যুবককে উত্তমমধ্যম দিয়ে দুইজনকে আটক করে তরুণীর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং বাবা-মার কাছে তুলে দেন। ঘটনার কিছু সময় পর দলবল নিয়ে ফের ওই যুবক ঘটনাস্থলে এসেই নুরুন্ নবীর উপর হামলে পড়ে, এলোপাথাড়ি হামলা চালিয়ে তারা বীর দর্পে চলে যায়। পরে এলাকাবাসী গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মহেশখালী হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে। নিহত নুরুন্ নবীর বয়স আনুমানিক ১৯ বছর বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত নুরুন্ নবী ও ওই তরুণীর একাধিক আত্মীয়-স্বজন জানান- স্থানীয় শফি আলমের মেয়ে ও সিপাহী পাড়ার ফরিদুল আলম এর পুত্র মো. সাগর রাতে অসামাজিক কার্যকলাপের সময় মেয়ের চাচা ফরিদুর আলমের নেতৃত্বে স্থানীয়রা তাদের আটক করে তাদেরকে পিতা শফি আলমের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ না করার জন্য অনুরোধ করে রাতে যে যার মতো চলে যায়। ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পরে ওই তরুণী ও যুবক সাগর এর পক্ষের ২৫-৩০ জন লোক দলবদ্ধ ভাবে এসে দক্ষিণ মাইজ পাড়া গ্রামের লোকজনের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা তরুণীর চাচা ফরিদুর আলমের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালাতে থাকে। গ্রামের লোকজন এগিয়ে এলে গ্রামবাসীর উপরও হামলা চালায় তারা। এ সময় লোহার খন্তা (শাবল) এর উপর্যুপরি আঘাতে ঘটনাস্থলেই নুরুন্ নবীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় কালা বাশি, সাইফুল, ফরিদ, ইব্রাহীম, মুকসুদ, নুর হোসেন ও তারেকসহ আরও কয়েকজন আহত হয়। হামলাকারীরা সকলই ওই ইউনিয়নের সিপাহী পাড়া ও আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা বলে স্থানীয়রা জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন জানান- গভীর রাতে অসামাজিক কার্যকলাপের সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করে। এ ঘটনার জেরে মেয়ের পিতা ও প্রেমিক যুবকের লোকজন মিলে ২০-৩০ জন সন্ত্রাসী এসে হামলা চালালে ঘটনাস্থলেই নুরুন্ নবী মৃত্যুবরণ করে।

নিহত নুরুন্ নবীর ভাই সাইফুল ইসলাম জানান- তার ভাই নুরুন্ নবী একজন পানচাষি, বাবার সাথে পানের বরজে কাজ করেন। প্রতিদিনের মতো বাড়িতে শুয়ে পড়েছিলেন, গভীর রাতে বাইরে হট্টগোল হচ্ছে দেখে তিনি ও তার ভাই বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদূর যেতেই হামলাকারীরা তার ভাইকে ধরে ফেলে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে, এক পর্যায়ে খন্তা দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করলে নুরুন্ নবী মাটিতে লুটে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মহেশখালী হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- ভোরের দিকে মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে, শরীরের ভেতর গুরুতর আঘাত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন লম্বাঘোনা আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার নুর আলীর পুত্র মো. বাদশা(৪৫), ও নেজাম উদ্দিন(৩২), মাইজ পাড়া এলাকার মৃত. কবির আহমদ এর পুত্র শফিউল আলম(৩৫), সিপাহির পাড়া এলাকার গোলাম কুদ্দুস এর পুত্র মহিম উদ্দিন (২৪) ও মো. অন্তর মনি (১৮)।

মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) কাইচার হামিদ বলেন- এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। সকালেই লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট সংগ্রহ শেষে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকেলে স্থানীয়ভাবে নিহতের জানাজা ও দাফন সস্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের অভিযানে তরুণী বাবা শফি আলমসহ ৫জনকে আটক করেছে। নিহতের ঘটনায় রাত ১০টা পর্যন্ত মামলার এজাহার নিয়ে কেউ আসেনি।