Advertisement


শুটকি মানেই মহেশখালী- দাম আকাশচুম্বী


শেখ আব্দুল্লাহ।। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী দেশের একমাত্র পাহাড়ী জনপদ পরিচিত মিষ্টি পান, শুটকি, লবণ,চিংড়ি শিল্প নিয়ে, এবছর শীতের শুরু হতে চাহিদা বাড়ছে মহেশখালীর অর্গানিক শুঁটকির, মহেশখালী দ্বীপের কয়েকটি মহালে অর্গানিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। 

পর্যটকদের কাছে মহেশখালী দ্বীপের অর্গানিক শুঁটকির চাহিদা বিগত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। দ্বীপে ঘোরাঘুরি শেষে ফিরে যাওয়ার সময় পর্যটকরা নিয়ে যাচ্ছেন শুঁটকি, মিষ্টি পান। শীতের শুরু থেকেই উৎপাদন বেড়েছে অর্গানিক শুঁটকির।

স্থানীয়রা বলছেন, খাবার তালিকায় ভোজনরসিকরা সুস্বাদু খাবার হিসেবে শুঁটকি রাখেন। স্বাস্থ্যসচেতন ভোক্তারা দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছেন মহেশখালীর অর্গানিক শুঁটকির প্রতি। লবণ-বিষ ও কেমিক্যালমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত এ শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই মাছের প্রাকৃতিক স্বাদ ও মান বজায় থাকে। ভোক্তাদের চাহিদামতো প্যাকেজিং করে বাজারজাত করা হচ্ছে।

বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মী দিয়ে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদিত সামুদ্রিক লইট্টা, ছুরি, সুরমা, রূপচাঁদা, কালিচাঁদা, ফইল্লা, চিংড়ি ও ফাইস্যা মাছের শুঁটকি দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়িরা

কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই কেবল সূর্যের আলোয় সাত থেকে আট দিন শুকিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয় লইট্যা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, টুনা, মলাসহ অন্তত ২২ ধরনের মাছের শুঁটকি। রোদে শুকানোর পর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত হয়ে গেলে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়।

শুঁটকি তৈরির প্রথম পর্যায়ে সমুদ্র থেকে আহরণ করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মান যাচাই করা হয়। তারপর প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। এরপর প্রাকৃতিক হলুদ-মরিচের গুঁড়ামিশ্রিত পানিতে ১০/১৫ মিনিট চুবিয়ে রাখা হয়। বিশেষভাবে নির্মিত জাল দিয়ে ঘেরা ঘরে রাখা হয়। 

বর্তমানে প্রতি কেজি রূপচাঁদা শুটকি ২ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, মাইট্যা ১৭০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা, কোরাল ১৯০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, পোপা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চিংড়ি ২৫০০শ থেকে ৩ হাজার টাকা, লইট্যা ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, ছুরি ১৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, অন্যান্য মাছ ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে।

অর্গানিক শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা আবু শাহেদ মিশাল বলেন, ‘সচরাচর পচন রোধে শুঁটকিতে কীটনাশক ও ওজন বাড়াতে লবণ ও ডিডিটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিশুদ্ধ শুঁটকিতে এসব করা হয় না। শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আমরাই কেবল সূর্যের তাপের মাধ্যমে শুঁটকি উৎপাদন করি। এ সময় শুঁটকির মাচাগুলো মশারি ও প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা থাকায় মশামাছি বসতে পারে না। অর্গানিক উপায়ে উৎপাদন করা হচ্ছে শুঁটকি, শুকানোর পর শুঁটকি উন্নত প্রযুক্তির ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে প্যাকেটজাত করা হয়। প্যাকেটের সময় ভেতরে অক্সিজেন থাকলে পোকা বা জীবাণু জন্ম নেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু আমাদের শুঁটকিতে সেই ঝুঁকি নেই। এ ছাড়া এতে করে শুঁটকি দীর্ঘদিন সতেজও থাকে।’ 

সাধারণ উপায়ে উৎপাদিত এক কেজি ছুরি মাছের শুঁটকির দাম ১৫০০ টাকা হলে এ ক্ষেত্রে দাম পড়ে প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২ হাজার ৬০০ টাকা। প্রতি কেজি লইট্টা ২ হাজার, মলা ১ হাজার ও লাক্ষ্যা মাছের শুঁটকির দাম পড়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকার মতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহেশখালীতে ২০ থেকে ৩০টির অধিক শুঁটকির মহালে কোনো শ্রমিক শুঁটকি পানিতে ধুয়ে নিচ্ছেন, কেউ কেটে রোদে শুকাচ্ছেন। এখানে ছুরি, লইট্যা, পোপা, ফাইস্যা, লাক্ষা, মাইট্যা, রূপচাঁদা মাছসহ বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে।

মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত স্বর্ণদ্বীপ খ্যাত সোনাদিয়ায় বৃহৎ শুঁটকিমহাল, ঘটিভাঙা শুটকি মহল, ঠাকুরতলা শুটকি মহল, ধলঘাটা শুটকি মহল অনেক পর্যটকই বলে থাকেন শুঁটকি মানেই মহেশখালী।

শুটকি মহলের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দেশের ২০/২৫ শতাংশ শুঁটকি মহেশখালীতে থেকে উৎপাদিত হয় বিশেষত সোনাদিয়া। এখানকার শুঁটকি তরতাজা মাছ কেটে করা হয় এবং এতে কোনো ধরনের ক্ষতিকর কীটনাশক কিংবা পাউডার মেশানো হয় না।  সোনাদিয়া দ্বীপে এখন শুঁটকি মাছ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। 

ঢাকা মিরপুর থেকে আসা সৈয়দ নুর আহমেদ বলেন, ‘কক্সবাজারে ভ্রমণর এলে মহেশখালীতে ঘুরতে আসি। এখানে এলে আমাদের নিজেদের ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য শুঁটকি নিয়ে যাই। এবার ২০ কেজি শুঁটকি নিয়েছি।’

মহেশখালী অর্গানিক শুঁটকি বিতানের মালিক আবু ফয়সাল জানান, প্রতি সপ্তাহে সোনাদিয়া, ধলঘাটা, মাতারবাড়ী, কুতুবজোমসহ মহেশখালীর বিভিন্ন শুঁটকিমহাল থেকে সপ্তাহে গড়ে কয়েক টন শুঁটকি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকেন।

মহেশখালী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ অফিসার আলা উদ্দিন বলেন, ‘মহেশখালীর সোনাদিয়ায় ধলঘাটা মাতারবাড়ী শুঁটকি উৎপাদনের বিশাল জায়গা। শীতের শুরুতে এখানে উৎপাদন বাড়ে। এ ব্যাপারে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।